বিনিময় নয় বিচার চাই : আলী ঈদরিস

মা, , তুই আমারে ঢাকা শহরে যাইতে দিবি না?
দরকার কি বাবা গেরামের ঘরবাড়ি ছাইড়া ঢাকা শহরের গাড়ি-ঘোড়ার ভিড়ে গিয়া পড়নের কি কাম করবি তুই, থাকনের জায়গা পাইবি কোথায়, খাইবি কী?
মা তোর একই ঘেন-ঘেনানি। গ্রাম থাইকা হাজার হাজার মানুষ যায় নাই ঢাকা শহরে, তারা যেমুন থাকে, যেভাবে খায়, আমিও হেইভাবে থাকমু, খাইমু।
এত বড় করছি তোরে নিজের হাতে খাওয়াইয়া, নিজের ঘরে শোয়াইয়া। তোর বাপ মরছিল তোর যখন বয়স তিন বছর। এরপর থাইকা কষ্ট কইরা তোরে পালছি। তোর নানা নানি কতবার আমারে বিয়া দিতে চাইছে, কইছে শাওনরে আমরা পাইলা বড় করমু, তুই আবার বিয়া কর, আমি রাজি হই নাই। তোর বাপের ছোট ভিটাটা কামড়াইয়া পইড়া রইছি। তুই ঢাকা গেলে আমি কারে লইয়া থাকমু, বাজান।
এ পর্যায়ে মা ডুকরে কেঁদে উঠলেন। শাওন আর কথা বাড়াল না, মাকে শান্ত হয়ে ঘুমাতে বলল। পরদিন সকালে মা পান্তাভাত আর শুঁটকির বাসি ব্যঞ্জন দিয়ে ছেলেকে নাস্তা দিলেন। শাওন একথালা খেয়ে ক্ষেতে কাজ করতে গেল।
শাওনের বাবা আজগরের পৈতৃক জমি সামান্যই ছিল। তন্মধ্যে অর্ধেকই চলে গেছে সরকারের অধীনে। বিসিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার এসব জমি নামমাত্র দামে অধিগ্রহণ করেছিল। দু-তিন দফায় দাম পরিশোধ করায় এ টাকা সংসার খরচেই চলে গেছে। অথচ আজ পনরো বছর হলো কোনো শিল্প গড়ে ওঠেনি। এখন এসব জমিতে গরু ছাগল চড়ে বেড়ায়। সরকারের এ রকম অধিগ্রহণ-নীতি গরিবের জন্য আত্মঘাতী। যে জমিতে শাওনের বাবা ফসল ফলিয়ে সারা বছর সংসার চালাতেন, সে জমি থেকে এখন শাওন গরুর জন্য ঘাস কুড়িয়ে আনে। মা বলেনÑ গরিবের পোড়া কপাল, সরকারও কাঙালের ধন কেড়ে নেয়। স্বামী জীবিত থাকতে সবটুকু জমিতে ফসল ফলিয়ে সংসারটা সচ্ছলভাবে চলত। এখন নুন আনতে পান্তা ফুরায়। মায়ের আক্ষেপ ছেলেকে সপ্তাহে একদিনও মাছ দিয়ে ভাত দিতে পারেন না। শাওনের আক্ষেপ মায়ের পরনে ছিন্ন শাড়ি, নতুন শাড়ি কিনে দিতে পারে না, শীতে একটি গরম শাল কিনে দিতে পারে না। নিত্য অভাব অনটনের ধারালো দাঁতগুলোর বিকৃত হাসি দেখে শাওন মাকে জানায়, সে ঢাকা শহরে গিয়ে আরও অধিক উপার্জন করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবে, মায়ের মলিন মুখে হাসি ফোটাবে। জমি চাষ করা ছাড়া শাওনের অন্য কোনো কাজ জানা না থাকলেও সে কাজ একটা বেছে নেবেই। রিকশা চালানো কঠিন কাজ নয়, শাওনের বিশ্বাস অন্য কোনো কাজ না পেলে সে রিকশা চালানো শিখে নেবে।
আষাঢ় মাস এলেও বৃষ্টির দেখা নেই। একটু খানি শাইল জমিতে বৃষ্টির অভাবে শাওন লাঙ্গল ধরতে পারছে না। আজকাল আবহাওয়াও আজব আচরণ শুরু করছে। আষাঢ়ে বৃষ্টি হয় না, বৈশাখে অতিবৃষ্টিতে ফসলের জমি তলিয়ে যায়। গত বছরও প্রকৃতির এ রকম বৈরী আচরণের জন্য মানুষের দুর্ভোগ হয়েছিল। শাওন ফসলের ওপর লগ্নি করে সংসার চালাচ্ছিল, সেই লগ্নির টাকা এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। শোধ করতে পারেনি। লগ্নির বোঝা আর বাড়ানো সম্ভব নয়। শাওন স্থির করল এ সপ্তাহেই ঢাকা শহরে যাবে। কয়েক দিন পর এক বর্ষণমুখর সকালে অশ্রুসিক্ত নয়নে শাওনের মা শাওনকে বিদায় দিলেন।
প্রবাদ আছে ঢাকা শহরে টাকা ওড়ে, যে ধরতে জানে সেই ধরে। বসত ভিটেহারা গ্রামাঞ্চলের লাখ লাখ পরিবার ঢাকার বস্তি এলাকায় বাস করে। প্রত্যেকেই বেঁচে থাকার জন্য কিছু না কিছু করে। রিকশা, ঠেলা, ভ্যান, টমটম, সিএনজি চালিয়ে শত শত শ্রমজীবী শহরের উড়ন্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ঢাকায় শাওনের কেউ জানাশোনা ছিল না। তাই সে কমলাপুর রেল স্টেশনে নেমে প্রথম রাত স্টেশনেই কাটাল। পরদিন পাশের বস্তিতে গিয়ে কাজের খোঁজ-খবর নেওয়ার সময় বস্তির সর্দার শর্তসাপেক্ষে রিকশা চালানোর ব্যবস্থা করে দিল। শর্ত হলো প্রথম মাসের অর্ধেক রোজগার তাকে দিতে হবে। অনন্যোপায় শাওনের হাতে কোনো বিকল্প ছিল না। যেভাবেই হোক কিছু অর্থ পাঠিয়ে অভাবী মার মুখে একটু হাসি ফোটানোই ছিল তার ব্রত।
শাওন রিকশা চালিয়ে ছ’মাসে বিশ হাজার টাকা জমিয়ে মাকে পাঠাল। এখন সে নিজকে দক্ষ রিকশাচালক মনে করে, ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট চেনা হয়ে গেছে এবং নিজের ওপর পুরোপুরি বিশ্বাস জন্মেছে। একদিন নটর ডেম কলেজের ক্রসিং পার হওয়ার সময় উত্তর দিক থেকে দ্রুতগামী একটি বাস শাওনকে চাপা দিলে শাওনসহ রিকশার সম্মুখভাগ পিষ্ট হয়ে যায়। একটি টগবগে যুবকের তাজা রক্তের ধারা রাজপথ লাল রঙে রঞ্জিত করে দিল। যাত্রী দু’জন বেঁচে গেলেও শাওনের মাথা ও মুখমণ্ডল পুরোটাই থেঁতলে গিয়েছিল। পথচারীদের ভিড় ঠেলে ঘাতক বাস পালাতে পারেনি, ড্রাইভারকে গণধোলাই দিয়ে থানায় সোপর্দ করা হলো।
রিকশা মালিকের ঠিকানার সূত্র ধরে বস্তির সর্দারকে পাওয়া গেলে সর্দার শাওনের গ্রামের ঠিকানা খুঁজে বের করল। শাওনের গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার পাইকপাড়া গ্রামে। বাস মালিকের খরচে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একটি পিকআপ ভাড়া করে শাওনের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন। মায়ের বুকের ধন মায়ের কাছেই ফেরত গেল, কিন্তু জীবিত নয়। লাশবাহী পিকআপ পাইকপাড়া গ্রামে পৌঁছলে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা গেল। গরিবের ছেলে হলেও শাওন গ্রামাবাসী সবার প্রিয়পাত্র ছিল। কারুর সঙ্গে ঝগড়া বা কটূক্তি করতে তাকে দেখা যায়নি। শাওনের মা যখন ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পেলেন তখন তার মাথার ওপর যেন বিশাল আকাশটা ভেঙে পড়ল, বুকের পাঁজরে যেন হিমালয় পর্বত চাপা দিল। শোকার্ত মহিলা আর চেতনা ধরে রাখতে পারলেন না, সংজ্ঞা হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। হতবাক গ্রামবাসীও যেন নির্বাক, নিস্পন্দ হয়ে গেল। চেতনা হারানো মা সংজ্ঞা ফিরে পেলেও গ্রামবাসীরাই ছেলের দাফন-কাফন সম্পন্ন করল। শোকে পাথর মা নির্বাক, নিশ্চল হয়ে বিছানা নিলেন। টগবগে জোয়ান, একমাত্র ছেলের অকালমৃত্যু মেনে নেওয়া মার জন্য বড় কঠিন।
কয়েক সপ্তাহ পর ঘাতক বাসের মালিক নগদ এক লাখ টাকা দিয়ে শাওনের মার নিকট লোক পাঠালেন। লোকটি মহিলাকে টাকা দিলে শাওনের মা সেটা ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, আমার ছেলের জীবনের দাম অর্থ দিয়ে শোধ হয় না। আপনার মালিককে বলবেন যে, শাওনের মা ছেলের জীবন বিক্রির টাকা দিয়ে বাঁচতে চায় না। সে বিচার চায়। বাস মালিকের প্রতিনিধি অনেক অনুরোধ করলেন ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করার জন্য। কিন্তু ছেলেহারা মা কিছুতেই রাজি হলেন না। গ্রামের এক দরিদ্র মহিলা এক লাখ টাকা ফিরিয়ে দেয় বাস মালিক সমিতির সভাপতি ত্রিশ বছরের ব্যবসা জীবনে এ রকম ঘটনা শোনেননি। পরদিন তিনি নিজে দুই লাখ টাকা নিয়ে এসে শাওনের মার হাতে তুলে দিয়ে বললেন, এই টাকা না রাখলে আমার খুব খারাপ লাগবে মা। কিন্তু শাওনের মা সিদ্ধান্তে অবিচল, স্থির। তিনি বললেন, আমার বুকের ধনকে হারিয়েছি, এখন কার জন্য বাঁচব। আমি না খেয়ে মরলেও পুত্রের প্রাণের বিনিময় করব না। আমি বিচার চাই, নিরপেক্ষ, ন্যায্য বিচার। এ দেশের কোর্ট-কাচারি সেই বিচার দিতে না পারলেও ওপরওয়ালার আদালত থেকে অন্তত বঞ্চিত হব না। শাওনের মার চোখ অশ্রুতে ভরে গেল। সভাপতি অভিভূত হয়ে ফিরে গেলেন।
এতগুলো টাকা অবলীলায় ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য গ্রামবাসী সবাই শাওনের মাকে দোষারোপ করল। কিন্তু পুত্রহারা মা নির্বিকার, নির্লিপ্ত। তিনি সারা দিনে একবার আহার করতে লাগলেন। সে হিসেবে ঘরে যেটুকু খাদ্য শস্য মজুদ আছে তাতে আগামী ধান কাটার মৌসুম পর্যন্ত চলে যাবে। মহিলা সারাদিন জায়নামাজে বসে নামাজ পড়েন, পুত্রের জন্য দোয়া করেন। দোয়া করতে গিয়ে কখনও ফুঁপিয়ে কাঁদেন, কখনও ডুকরে কেঁদে ওঠেন। অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগলে দুমুঠো মুড়ি চিবিয়ে পানি খেয়ে নেন। এভাবেই শোকভরা দুঃখের দিনগুলো কাটতে লাগল। দেখতে দেখতে ছ’মাস কেটে গেল।
‘গ্রামেগঞ্জে সবচে বড় উৎসবের সময়’Ñ আমন ধান কাটার মাস অগ্রহায়ণ। দিনরাত ধান মাড়াই, শুকানো অতঃপর গোলায় ভরে রাখা। ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েশ খাওয়ার উৎসব। এ দিনে মা শাওনকে বিভিন্ন রকম পিঠা বানিয়ে খাওয়াতেন। এখন কার জন্য পিঠা বানাবেন। দু-তিন দিনে একবার হয়তো চুলোতে হাঁড়ি ওঠে। ভোরে পাখির ডাক, আর আজানের ধ্বনিতে ঘুম ভাঙে। নির্মল, পবিত্র ভোরের বাতাসে শাওনের মা জায়নামাজে বসেন। ফজরের নামাজ পড়েন। আবার জায়নামাজেই শুয়ে পড়েন। দুপুরে উঠে কর্মহীন, প্রাণহীন সময় কাটান। নাওয়ার গরজ নেই, খাওয়ার তাগিদ নেই, এক অসীম উদাসীনতা, নির্লিপ্ততা নিয়ে জীবন কাটানো দুঃসহ হলেও মানুষ সবই মেনে নেয়। শাওনের মাও মেনে নিয়েছেন।
একদিন শাওনের মার কাছে গ্রামের একমাত্র প্রৌঢ় এলেন এবং বললেন, সবাই কইতাছে কাজটা তুমি ঠিক কর নাই বুবু।
কোন কাজটা দাদা?
এ যে দুই লাখ না কত টাকা ফিরাইয়া দিলা। টাকাটা হাতে থাকলে একটু ভালো মন্দ কিনে খাইতে পারতা। অসুখে বিসুখে ডাক্তার দেখাইতে পারতা।
টাকাটা হাতে নিয়া কি মনে হইছিল আমার জানো দাদা, মনে হইছিল যেন ছেলের জানের দামটা আমার হাতে তুইলা দিল কেউ। এই ছেলেটাই ছিল আমার জান। যার জন্য আমি বিধবা হইয়াও জীবনের সব সুখ বিসর্জন দিছি। আমার ছেলেটারে মাইরা ফেলল! কথাগুলো বলেই শাওনের মা ডুকরে কাঁদতে লাগলেন। প্রৌঢ় কিছুক্ষণ বসে সান্ত¦না দিয়ে চলে গেলেন।
শাওনের মৃত্যুর পর দু’বছর পার হয়ে গেছে। বাস মলিকের কাছে মনে হয় সেদিন, ঘটনা এই সেদিন মাত্র ঘটেছিল। কিন্তু শাওনের মার কাছে মনে হয় এক যুগ। এদিকে চালক জেল খেটে বেরিয়ে আবার বাসটি চালাচ্ছে। শাওনের মৃত্যু নিয়ে তার মনে কোনো অনুভূতি অবশিষ্ট নেই, যেমন নেই বাস মালিকের। হঠাৎ একটি দুর্ঘটনার খবর সভাপতির পরিবার ও বাস মালিক সমিতির সদস্যদের মধ্যে বিষাদের ছায়া ছড়িয়ে দিল। ঘাতক বাস মালিকের একমাত্র ছেলে নিজের পাজেরো চালিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছিল। পথে একটি চলন্ত বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে সে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায়। বাস ড্রাইভার পালিয়ে গেছে। সভাপতির ছেলে বলে কথা, মালিক সমিতি একদিনের শোক ঘোষণা করেছে। চারদিকে বিষাদের ছায়া। সবাই বলছে, সভাপতির ছেলের এমন দুর্ঘটনা কেউ কল্পনা করতে পারেনি। অথচ প্রতিদিন দুর্ঘটনায় কত যাত্রী প্রাণ হারায়, মালিক সমিতির সদস্যরা ‘আহা’ শব্দটিও করে না। ড্রাইভারও ধরা পড়ে না। বাস মালিক ড্রাইভারকে বাঁচাতে কত চাল, কত চেষ্টা-চরিত চালায়। কিন্তু সভাপতির ছেলের ঘাতক ড্রাইভারকে সেদিনই খুঁজে বের করে পুলিশে দেওয়া হলো।
একমাত্র ছেলে হারিয়ে সভাপতি বাকরুদ্ধ। পরিবারে শোকের কালো ছায়া। নাওয়া খাওয়া, চুলা জ্বালানো বন্ধ। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের বাসা থেকে অনবরত সকাল-সন্ধ্যা লোকজন ও খাবার আসতে লাগল। কিন্তু সভাপতির এসব মোটেই ভালো লাগে না। ছেলে হারানোর শোক ও শূন্যতা যেন তাকে নিশ্চল, নির্বাক করে দিয়েছে। সভাপতি একান্তে একলা বসে থাকেন। যে মালিক সমিতির প্রেসিডেন্ট তথা দু’ডজন বাসের মালিক ঘুমোবার সময়টুকু বাদ দিয়ে বলতে গেলে চব্বিশ ঘণ্টা অফিসে, মিটিংয়ে, অথবা টেলিফোনে ব্যস্ত থাকতেন, একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে সব যেন অর্থহীন, বেকার হয়ে পড়েছে। তিনি এখন চুপচাপ চোখ বুজে বসে থাকেন। কখনও খবরের কাগজে, কখনও বইয়ের পাতায় চোখ বুলান নিজের যাপিত জীবন নিয়ে ভাবেন। জীবনে অঢেল অর্থ-বিত্ত, সম্পত্তি অর্জন করেছেন যার কোনো হিসাব নেই। জীবনের হিসাব মেলে না, কোথায় যেন ভুল হয়েছে, অন্যায় হয়েছে যার খেসারত হিসাবে একমাত্র পুত্রের প্রাণ দিয়ে দিতে হয়েছে। তিনি নাস্তিক নন, আবার নামাজ রোজাও করেন না। তাই মনে মনে স্বীকার করলেন যে ধর্মে তার শক্ত, মজবুত বিশ্বাস নেই। ধর্মমতে যার প্রতি অন্যায় হয় তার কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে নতুবা আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। সভাপতি জ্ঞানত বহু মানুষকে ঠকিয়ে অগাধ অর্থ বিত্ত অর্জন করেছেন। তার বাসের চাকার নিচে বহু নিরপরাধ যাত্রী ও পথচারী হতাহত হয়েছে, তাদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেননি। কিন্তু শাওনের ঘটনা তার বিবেকে প্রচণ্ড নাড়া দিল। হতদরিদ্র শাওনের মা যিনি পুত্র হারানোর ক্ষতিপূরণ বাবত দু’লাখ টাকা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, সভাপতি হয়েও তিনি সেই চালকের বিচার করা তো দূরের কথা, মামলার শুনানিকালে উকিল দিয়ে সশরীরে হাজিরা মওকুফ করিয়েছেন। কারণ একদিন বাস রাস্তায় না নামালে বিশ হাজার টাকা ক্ষতি হয়। আজ নিজের ছেলের ঘাতককে কি সেই সুবিধা দেবেন? নিজের কাছে নীরবে প্রশ্ন করতেই নিজের পর্যুদস্ত বিবেক জেগে উঠল।
সভাপতি পুত্রের ঘাতক ড্রাইভারকে পুলিশে দিয়ে মামলা করলেন এবং শাওনের ঘাতক ড্রাইভারের বিরুদ্ধেও মামলা করলেন। মালিক সমিতির সদস্যরা সভাপতির পরিবর্তন দেখে অবাক হয়ে গেল, তারা সবাই এ উদ্যোগের প্রতিবাদ করল। অবশেষে সভাপতি নগদ পাঁচ লাখ টাকা শাওনের মার হাতে দিয়ে ক্ষমা চাইতে গেলেন। মহিলার পাল্টা প্রশ্ন ছিলÑ এ পাঁচ লাখ টাকা আমি আপনাকে দিলাম। এর বিনিময়ে আপনি পুত্রশোক ভুলতে পারবেন? সভাপতির কাছে কোনো প্রত্যুত্তর ছিল না।
সচিত্রকরণ : রাজীব দত্ত