বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা

তমিজ উদ্দীন লোদী
তারপর তুমি এলে স্বাধীনতা
ছিল সেটি মৃত্যু উপত্যকা। আমাদের শিক্ষালয়ের দেয়ালের ফোকর দিয়ে আমরা দেখতাম মৃত্যু। আছড়ে পড়া মানুষের আর্তনাদ। বুলেটে ঝাঁঝরা দেহ ওরা টেনে নিয়ে যেত শেয়াল কি কুকুরের দেহের মতন। সেইসব দিন ছিল শীতলতম। হিমধরা শবের মতন।
ছিল শঙ্কা, ত্রাস, হিমধরানো ও অনিশ্চয়তার দিনরাত্রি।
তারপর তুমি এলে, স্বাধীনতা। যেন প্রেমিক এলো দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর। আকাশ জুড়ে স্বপ্নময় প্রতীক্ষা নক্ষত্রের মতো হেসে উঠলো। কোথায় যেন উধাও হয়ে গেল বিষণ্নগোধূলি। কোনো সতর্কসংকেত ছাড়া চুপচাপ বৃষ্টি পড়তে থাকল অবিরাম।
আকাশে আকাশে রঙধনু, হাউই উড়ল। যুদ্ধফেরৎ ভাইয়ের হাত থেকে অস্ত্র নিয়ে আকাশে গুলি ছুড়লো দূরন্ত কিশোর। শঙ্কা, ভয় কি ত্রাসের বিপরীতে হাস্যোজ্জ্বল তুমি এলে আমাদের প্রতিটি সহনশীল ও সাহসী ঘরের চৌকাঠে।
সোহরাব পাশা
বঙ্গবন্ধু : বাংলার স্বরলিপি
আমি তো ভাষার ক্রীতদাস
বাংলা আর বাংলাদেশ আমার পবিত্র উচ্চারণ
আমার স্বপ্নের ধ্রুপদী আলোর ল্যাম্পপোস্ট স্বর ও ব্যঞ্জন
রাত্রির পাতায় খোলে অবিনাশী ভোর
রোদের পাপড়ি ঝরে নিরিবিলি শিমুল-পলাশে
মৃত্তিকায়, ঘাসে ফোটে নিবিড় উজ্জ্বলতার স্নিগ্ধ কোলাহল,
এইখানে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে বিনয়ী বৃক্ষের দীর্ঘ ছায়া
পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই এমন অমিয় আশ্রয়ের মায়া
এখানে আঙুলে ফোটে আগুনের গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল
শ্রেষ্ঠ শিল্পী মুক্তিসেনা শোণিতে এঁকেছে স্বদেশের মুখ
মেঘলা সন্ধ্যায় বিরুদ্ধ হাওয়ায় মাথা নত করে না এদেশ
শহিদ মিনারগুলো অনুবাদ করে প্রাণের পঙ্ক্তিমালা
ওরা আঁধার রাতের দৃপ্ত আলোর মিছিল-অমিত সাহস
দূরবর্তী বেভুল দ্বীপের জ্যোতির্ময় বাতিঘর
এইখানে জ্বলে ক্ষিপ্র সূর্যের অপূর্ব চিত্রকল্প
অমিতাভ চেতনায় বিনিদ্র রবীন্দ্র-নজরুল
রংধনু রোদের শব্দে আঁকা সেরা কবি জয়নুল
এইখানে হঠাৎ বিষণ্ন রাত্রি নামে-বেদনায়
পাখিরাও ভুলে যায় ডানায় রচিত স্বপ্নভাষা
পঁচাত্তরে পনেরো আগস্ট শোকভেজা স্বরলিপি
আমার প্রাণের বর্ণমালা আর স্বদেশের মাটি
নিরন্তর জ্বলে অনির্বাণ শিখা শোকের দহন
হে স্বদেশ, ‘এখন দুখিনী’ নও আর
চারদিকে জেগে আছে দেখো ঘুম ভাঙানো পাখিরা
নিঝুম রাত্রির শেষে ডাকে ওই সুবর্ণ সকাল
এখনও উদ্ধত ওই বঙ্গবন্ধুর দৃপ্ত তর্জনী।
বঙ্গবন্ধুর নামে হেসে ওঠে প্রিয় বাংলাদেশ।

সুমন রায়হান
হৃদয়ে মুজিব অস্তিত্বে বাংলাদেশ
শব্দ ছায়ার গুঞ্জন ঊর্ধ্বগামী বাতাসÑ
দিনের আলোর মতো স্বচ্ছ রাত।
বেদনার মেঘ উড়ে যায় দূরে…
প্রচ্ছন্ন সুখের অসুখ! লাটিম সুতোর ঘূর্ণি…
প্রিয় মা-মাতৃভূমি, আমার জল-কাদা-মাটিÑ
অঙ্গে জড়াই ভালোবাসার বৃষ্টি।
কি সুখে কাঁদো? বেলেল্লাপনা বেড়ে গেছে বড়ো।
সুতীব্র চুম্বন; মথিত আঙ্গুল।
আঙ্গুলে ট্রিগার, মৃত্যুর মিছিল, বুকে যন্ত্রণার ছাপ!
বিপন্নবাতাস দেয় অশনি সংকেত;
মাঠ কাঁদে, ঘাট কাঁদে, নদী কাঁদে, কাঁদে কাদাজল,
দুঃখিনী মায়ের আর্তচিৎকারে চোখ অশ্রু সজল…
স্বদেশ মুক্তির প্রবোধ বুকে-
অতঃপর স্বাধীনতার ঘোষণা…
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
তারপর শুধুই ইতিহাস-
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল আমাদের নিজস্ব ভূমি।
পৃথিবীর বুকে একটি মানচিত্র আমাদের।
লাল-সবুজের পতাকা আমাদের।
সেই থেকে পরাধীনতার দিন শেষ;
হৃদয়ে মুজিব, অস্তিত্বে বাংলাদেশ।
শাহীন ভূঁঞা
মুজিব
বিপ্লব, বিদ্রোহসত্তা দেখালো যে-জীবন নিজের
দেশের মুক্তির জন্য, ছুটে গেল যে নিঃশঙ্ক প্রাণে;
দিয়ে গেল বজ্র-বার্তা ঝড়ের মতন কোটি কানে,
মুহূর্তে জাগিয়ে দিলো ভীত প্রাণ, সব মানুষের,
মৃত্যুঞ্জয়ী সে-মুজিব জেগেছিল দেশের কল্যাণে,
সুরের কোকিলগুলো করেছিল মুখর মধুর,
রেইসকোর্সের পথ শুনেছিল যে কূজনসুর;
সে-ভাষণ ঠাঁই পেলো উৎকণ্ঠিত প্রাণে সবখানে।
কালজয়ী অগ্নিবাণী …মুজিবের সে-তপ্ত ভাষণ
বিপ্লব স্পন্দিত বুকে, বিপ্লবের প্রত্যেক প্রান্তরে
অথবা শত্রুর সেই তপ্ত বুকে; …বেগার্ত বাতাসে।
আজো শোনে সে-ভাষণ এ-দেশের সব জনগণ
বিপর্যস্ত প্রাণ যতো; …কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে ঘরে ঘরে
যেমন মানুষ শোনে মুক্তির আহ্বান প্রাণোচ্ছ্বাসে।
শতাব্দী জাহিদ
স্বাধীনতা
যে আগুন জাতীয় পরিচয়পত্রের সীমানায় আটক
তোমরা তাকেই দেশ বলো স্বাধীনতা বলো কেউ কেউ
আমি তো পুড়িয়ে ছাই উড়াই বাতাসে বাতাসে
পরিচয় নাই ঠিকানা নাই―
সচিত্রকরণ : নাজিব তারেক