চিত্রকলা : হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি-৬ : নাজিব তারেক

কোলকাতা নগরে তখন ব্রিটিশ শাসন। জমিদারদের বাড়িতে বাড়িতে ভিক্টোরিয় রীতিতে আঁকা ছবির কদর। যদিও কালীঘাট তখনো গ্রাম্য তথা ভারতীয়কে বুকে ধরে আছে, এক-দু পয়সার ছবিতে। তা কিনছে কেরানি বাবুরা, যাদের অধিকাংশের পরিবার গ্রামে। ধর্ম ও পণ্য মিলে একাকার। এসময়ে ইউরোপ জুড়ে নতুন ব্যবসার পুঁজি নিয়ে বুর্জোয়া তথা মধ্যবিত্ত খুঁজছে নতুন আইডিয়া, নতুন নতুন পণ্য তার চাই। রমা রোলা দেখালেন পথ, কীর্তন শুরু করলেন ফোক ফোক করে। ব্রিটিশ অধ্যাপকেরা তাই ফোক বা উপনিবেশের নমুনা স্বরূপ কিনলেন কিছু কালীঘাটের পট, বেঁচে রইলো তারা ইউরোপের সংগ্রহশালায়। জাপানের ছাপাই ছবি, কালীঘাটের পট ও আফ্রিকার কাঠের মূর্তি, পারস্যের কার্পেট, মিনিয়েচার, মুঘল মিনিয়েচার, চৈনিক জলরং উপনিবেশের এসব নমুনা ইউরোপজুড়ে তোলপাড় তুলেছে। প্যারিস কাঁপছে সৃজন জ¦রে। ফোকাক্রান্ত নতুন পণ্য প্রতিচ্ছায়াবাদ থেকে ঘনকবাদ, বিমূর্ত থেকে ফভ, দাদা থেকে পরাবাস্তবাদ, বিবিধ কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়েছে হাজার পণ্যের। রপ্তানিও শুরু হবে হবে উপনিবেশের বাজারে। অবন তখন কলকাতা আর্ট পাশ, ইতালীয়ান গিলার্ডি আর ইংরেজ পামার তার গুরু। ১৮৮২-১৮৯৫ কালের মধ্যে ভিক্টোরিয় একাডেমিকের তুখোড় আঁকিয়ে, প্যাস্টেল, তেল রং। বিশেষত বাজার চাহিদার তুঙ্গে থাকা প্রতিকৃতি অঙ্কনে তিনিই তুমুল। কিন্তু ১৮৯২ এ আঁকলেন শুক্লাভিসার কিছু মুঘল মিনিয়েচার (ওস্তাদ মনসুর), কিছু রাজপুত। কিন্তু শিল্পীর মন খুঁজে অন্য কিছু, তাই পবন মিস্ত্রীর কাছে নেয়া হলো পাঠ ‘সোনা লাগানো’র। তারপর আঁকলেন বৈষ্ণব পদাবলী। এর মাঝেই পামারের কাছেই নিলেন জলরংয়ের পাঠ। হ্যাভেল কোলকাতা আর্ট স্কুলে যোগ দিলেন জুলাই ১৯৯৬। দু’জনের আলাপ জমে উঠলো শিল্প নিয়ে, ভারত শিল্প নিয়ে। যে ভারত পরাধীন, যে ভারত হারিয়েছে নিজেকে।
১৮৯৯ এ কলকাতায় প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে, জোঁড়াসাকোর ঠাকুর পরিবার সে প্লেগ প্রতিরোধের জন্য হাসপাতাল গড়ে তোলেন। অবন সে হাসপাতাল তত্বাবধানে নিয়োজিত ছিলেন, কিন্তু প্লেগ আঘাত হানলো ঠাকুর বাড়িতেই, অবন হারালেন তার শিশু কন্যাকে। ১৯০০ সালে অবন আঁকলেন শাহজাহানের মৃত্যু শয্যা। অবনের নিজের ভাষায়Ñ মেয়ের মৃত্যুর যত বেদনা বুকে ছিল সব ঢেলে দিয়ে সেই ছবি আঁকলুম।
সে ছবি প্রথম প্রদর্শন থেকেই আলোচনা তুঙ্গে। লালকেল্লায় বন্দি মৃত্যুশয্যায় সম্রাট শাহজাহান, পুত্র আওরঙ্গজেবের হাতে বন্দি, অন্যান্য পুত্রদের মৃত্যু সংবাদই শুধু এসেছে তার কাছে। কন্যা জাহানারা তার পদপাশে, শাহজাহান কি তাকিয়ে আছেন তাজমহলের দিকে? তিনি কি দেখছেন? তাজমহল না মমতাজ মহলকে খুঁজছেন? তাদের সন্তানেরা সিংহাসনের জন্য একে একে নিহত পরস্পরের হাতে, পুত্র আওরঙ্গজেবের হাতে। কন্যা জাহানারা নিজ শিরে হাত দিয়ে একা একা একা। তিন অলঙ্কৃত স্তম্ভ, মেঘে ঢাকা চাঁদ, জ্যোৎস্না আকাশ। সাদা পোশাকে শাহজাহান, কালো শয্যায়, বাদামি আচ্ছাদনে শায়িত। সন্তান হারানোর বেদনায় শাহজাহান ও অবনঠাকুর সমান অসহায়। দূরে দূরে শুধু জেগে রয় তাজমহল ও শাহজাহানের মৃত্যু শয্যা। মানুষের কর্ম কিংবা সৃজনকর্ম। শিল্প, শিল্পই মানুষের, মনুষ্যত্বের পরিচয়, অমরত্বের ঠিকানা। আর ভারত, সে আছে তার স্বদেশীয়ানায়। মহাভারত, মুঘল মিলিয়ে যে ভারত সেখানেই ভারত। আকবর গড়েছেন যা, শাহজাহান তার শেষ।

শয়তান, জীবন, অমরত্ব ও চাঁদ
আমাদের কালে প্রবাসী, বসুমতি ইত্যাদি পত্রিকা ছিলো না, ছিলো বিচিত্রা ও সন্ধানী, সেই সন্ধানীও নিয়মিত ছিলো না মফস্সলে। বিচিত্রা প্রচ্ছদ রচনায় বিচিত্র ছিলো বটে কিন্তু চারুকলা পাশ সম্পাদকের চিত্রকলা নিয়ে নিয়মিত আয়োজন তেমন ছিলো না। আমাদের ছিলো রহস্য পত্রিকা, তাদের আয়োজনেও চিত্রকলা না থাকলেও অলঙ্করণে থাকতো ইউরোপিয় চিত্রকলার উপস্থিতি। সে রকমই এক অলঙ্করণ হিসেবে স্পেন দেশীয় চিত্রকর ফ্রান্সিস গয়ার এই চিত্রকর্মটি প্রথম দেখা হয়, তা ছিলো সাদা-কালো মুদ্রণ। যে কোন ছবি সফল হয়ে ওঠে তার অঙ্কণ রীতি ও জ্যামিতিক বিন্যাসের কারণে। এ ছবিও তার ব্যতিক্রম নয়। সেই মুদ্রণেই সম্ভবত গয়ার আরও একটি ছবি ছিলো অথবা ছিলো না, কিন্তু অলঙ্করণ হিসেবে আরও কিছু ছবি ছিলো, কিন্তু আমার মনে আছে শুধু এ ছবিটিই। এই যে অংকনের বিজ্ঞান, যার প্রয়োগে এ ছবিটিই শুধু মনে আছে তা নিয়ে এ আলোচনা নয়। আলোচনাটি বিষয় নিয়ে, অংকন বিজ্ঞান ও বিষয় সম্পর্কে ধারণা মিলে চিত্রী এমন এক নির্মাণ সম্পন্ন করেন যে ‘একটি ছবি হাজার বাক্যের চেয়ে বেশী’ হয়ে ওঠে।
গয়ার ‘ডাকিনী দীক্ষা’ তার এক উদহারণ। ইশ্বর/ আল্লাহ/ ভগবান যেমন মানুষের কল্পনা তেমনি শয়তান/অসুরও মানুষের কল্পনা। শুভ (good) ও অশুভ (evil)- এর এই ভাবনায় মানুষ কখনও শুভর পুজারী তো কখনও অশুভের। ইউরোপ খ্রিস্ট ধর্মের আগে যে ধর্মের চর্চা করতে সেখানে জিউস, পসাইডন, হেডিস তিন ভাই, একই পিতার পুত্র। জিউস (Zeus) শুভ-এর প্রতীক তো, হেডিস (Hades) অশুভ এর প্রতীক। ভারতীয় ভাবনার দেবতা ও অসুর এর মত বটে কিন্তু হুবহু তা নয়।
খ্রিস্ট ধর্মে ইশ্বরই সকল কিছুর অধিকর্তা, কিন্তু খ্রিস্ট তার পুত্র হলেও শয়তান (devil) তার সৃষ্টি, যার রয়েছে জগতের সকল কিছুর উপর অধিকর্তা হওয়ার ক্ষমতা। যদিও সাময়িক তবু তো ক্ষমতা, জ¦রাক্রান্ত, ক্ষুধাক্রান্তজনের সাময়িক কষ্ট লাঘবের জন্য সেটাই কি যথেষ্ট নয়? খ্রিস্ট ধর্ম পূর্ব ধর্মাচারে হেডিসও পুজনীয় ছিলো। হেডিস পূজারিরা ছিলো underworld বাসিন্দা। কিন্তু খ্রিস্ট ইউরোপে underworld শিকার হলো ক্যাথলিক চার্চ এর আক্রমণের। কিন্তু মানুষের বিশ্বাস বা ভরসার বা কল্পনার বৈচিত্রকে কি বিনাশ করা যায়? যায় না, ইউরোপ জুড়ে হাজার বছরের দমন পীড়নেও হেডিস পূজা বন্ধ হয়নি। জিউস জেসাস বা ক্রাইস্ট হয়েছে যেমন, তেমনি হেডিস হয়েছে ডেভিল।
নিজেকে বাঁচানোর আকুতি মানুষকে কত নিষ্ঠুর ও ধ্বংসাত্মক করে তোলে তার এক চিত্র। বিশ্বজুড়ে পরিবেশ ও প্রাণীরক্ষা আন্দোলনের সাথে যারা যুক্ত তারা এ ছবি থেকে লড়বার উপাদান পেতে পারেন।

নাৎসি উত্থান
১৮৫৭ অথবা ১৮৭২ থেকে শিল্পের গতি পূর্ববর্তী সকল সময়ের চেয়ে বেশি, একটু বেশিই। সমাজের সকল অংশ সে গতির সাথে তাল মেলাতে পারেনি। এলিটেরাও কি পারছিলো? জার্মানিতে নাৎসি উত্থান তাই অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিলো। পুঁজিবাদের আভ্যন্তরীন লড়াইয়ে ধর্ম ও জাতি পরিচয় দিয়ে মেধা ও সন্ধানকে মোকাবেলার সামন্ত কৌশল হয়ে উঠেছিলো প্রবল সক্রিয়। সমাজের পিছিয়ে পড়ার সাথে এলিট শ্রেণির চাওয়া মিলে ইহুদি নিধনে মাতলো ইউরোপ। হিটলার ইউরোপের প্রতিক।
১৮৮৪ সালে জন্ম নেয়া ম্যাক্স বেকম্যান শিল্পের (Art & Industry) গতির যে ভূগোল, সেই ভূগোলের কেন্দ্রে, জার্মানিতেই জন্মেছিলেন। তার সমসাময়িক প্রায় সকলেই Expressionist. German Expressionist. একে শিল্পতাড়িত সমাজের গতি, এর সাথে যুক্ত হলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধে চিকিৎসা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বন্দি জীবন। সমাজ ও প্রকৃতির নিষ্ঠুর, অসহায় চেহারা দেখতে না চাইলে অন্ধ হয়েও খুব লাভ হবে না। তাই নিজেকে বারবার দেখে নেয়া, আত্মপ্রতিকৃতি আাঁকা সেই দেখারই অংশ। তো সে দেখার ফলও মিললো। ফ্রাঙ্কফুট একাডেমি আব ফাইন আর্টে আমন্ত্রিত হলেন শিক্ষক হিসেবে যোগ দিতে ১৯২৫ এ। এ সময়ে আঁকলেন লিখলেন, ভাস্কর্য গড়লেন, কিন্তু ১৯৩২ এ নাৎসি বা হিটলারের ক্ষমতারোহনের মধ্য দিয়ে শুরু হলো বিপরীত যাত্রা। ১৯৩৩ ম্যাক্স অপসারিত হলেন শিক্ষকতার পদ হতে। শুধু কি তাই সকল মিউজিয়াম থেকে সরিয়ে নেয়া হলো তার চিত্রকর্ম। Degenerate-এর তালিকা ভুক্ত হলেন ম্যাক্স, ইহুদি হিসেবে মৃত্যুই হতো তার কিন্তু ‘বলশেভিক’ হিসেবে দেশ ছাড়া হলেন ১৯৩৭ এ। ১৯৩২-১৯৩৭ সালের প্রতিদিনের অনিশ্চয়তা আর অপমানের যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে তাই একটু একটু করে আঁকলেন এই তিন খণ্ডের বিশাল ক্যানভাসে। বিশ্বযুদ্ধাক্রান্ত রবীন্দ্রনাথ লেখা থামিয়ে আঁকতে শুরু করছিলেন এ কারণে যে যা হচ্ছে তা তিনি ভাষায় প্রকাশ করতে অক্ষম, তাই আঁকছেন। ম্যাক্স সেখানে আঁকিয়ে। মিথ ও তাঁর নতুন বা একান্ত নিজস্ব ব্যাখ্যার ভিতর দিয়ে গড়ে উঠছে এ ছবি। ম্যাক্সের প্রাণে বেঁচে যাওয়ার পিছনে তার স্ত্রী ও সন্তানের ধর্ম পরিচয় কোন ভূমিকা রেখেছিলো কি? হয়তো, ছবির কেন্দ্রে সন্তান কোলে নারী তাই মুক্তির প্রতিক।

শিল্প কি ও মরুর সিংহ
শিল্প কোনটি, কোনটি শিল্প নয় তা কে নির্ধারণ করবে? একাডেমি বা প্রতিষ্ঠান। সামন্ত কালে জমিদার বা রাজা স্বয়ং প্রতিষ্ঠান, তার পছন্দ অপছন্দই শেষ কথা। তিনি আদর করে কোলে তোলেন তো তা শিল্পী, না নিলেন তো ‘লোক শিল্পী’ হিসেবে জীবনপাত অথবা হারিয়ে যাওয়া। তথাকথিত পুঁজিবাদ বা বণিক বা বেনিয়া কালে নগরে ঘটলো ক্ষমতার বন্টন। ইউরোপ রেনেসাঁর বেনিয়ারা প্রাসাদ ও গির্জা বানাতে, সাজাতে নিজ নিজ রুচির পরিচয় দিলেন। বদলে যেতে থাকলো শিল্পের রূপ। সামন্তের সীমানা ছিলো ভূগোলে। কিন্তু বেনিয়ার সীমানা কি? যে নগরে তার বাস, সে নগরে আছে আরও শত বেনিয়া! বেনিয়ার সীমানা মননে। গণ বা জন মনে। সেই জন বা গণমনকে বুঝতেই গণতন্ত্র। কিন্তু রচনা তো চলছে প্রতিনিয়ত, প্রতিনিয়ত গণমনের কাছে কোনটি শিল্প কোনটি শিল্প নয় তা কি জানতে চাওয়া যায়? তাই একাডেমি ও মিউজিয়াম। কবি, যিনি জনকণ্ঠ তিনি লিখবেন, তিনি জানাবেন শিল্প কোনটি। অধ্যাপক অধ্যয়ন ও বিতর্ক শেষে কবির সাথে ঐকমত্যে বলবেন, হ্যাঁ হ্যাঁ ইহাই শিল্প। সংগ্রাহক নিজে একা একা বা নিজ রুচিতে সংগ্রহ করতে পারেন, কবির সাথে বিতর্ক করতে পারেন, অধ্যাপকের সাথে পরামর্শ করতে পারেন। তিনে মিলিলে গণ জানিলে ইহা শিল্প, তারপর মহাকালের যাত্রা। কবি, অধ্যাপক, সংগ্রাহক এ তিন সমালোচনার তিন চরিত্র।
পুজিবাদের প্রারম্ভে গুরু-শিষ্য শোভিত স্কুলগুলিই ছিলো একাডেমি। কিন্তু মধ্যবিত্ত যখন বিস্তার লাভ করতে থাকলো, ঘর থেকেও কেউ কেউ যখন শিল্পী ও কবি হতে চাইলো তখন স্কুলগুলিতে দেখা দিলো সংকট, ধনীর পুত্র না দরিদ্রের পুত্র, কে প্রতিভাবান। কারিগর পুত্রের চেয়ে বণিক পুত্রের প্রতিভা কম নহে! গুরু কি করিবে, সে কি মহাভারত পাঠে দ্রোনাচার্য হইবে? একলব্যের আঙুল কাটিলে গির্জা রাঙাইবে কে? বণিক পুত্র মাচায় উঠিয়া ছাদচিত্র করিবে কি করিয়া। কেরানি পুত্র এঞ্জেলোকে ডাকো, গির্জাটি হওয়া চাই ‘সেরাম’। এই ‘সেরামে’র যাত্রায়, প্রতিভাকে খুঁজিবার উপায় একাডেমি ও এন্টি-একাডেমি। তো কেমন সে একাডেমি ও এন্টি-একাডেমির চলন। হেনরি (অঁরি) রুশোর ‘ঘুমন্ত বেঁদে বা বেদুইন’ চিত্রকর্মটির রচনা ও রচনা পরবর্তী যাত্রাপথ আলোচনায় জানা যাবে সে গাথা।
রুশো কোন স্কুলের ছাত্র ছিলেন না, তিনি স্বশিক্ষিত বা অপরের কাজ দেখে ও সেরকম ভাবে আঁকার চেষ্টা করে করে ও কিছু বই পত্র পড়ে তার আকঁবার দক্ষতা তৈরি হয়। কেউ তাঁকে এভাবে পেন্সিল ধরতে হয়, সেভাবে তুলি চালাও বলে শেখায়নি। ফরাসি গুরু গেরমের (Gerome) চিত্রের অনুকরণ অনুশীলনের মধ্য দিয়ে তার নিজস্ব অঙ্কনরীতি তৈরি হয়, বিষয়ে ও করণকৌশলে। রুশো ছবিটি আঁকবার পর তা লাভালের মেয়রের কাছে বিক্রয় করবার জন্য নিয়ে যান, মেয়র সেটা স্থানীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠান। জাদুঘর কর্তৃপক্ষের ছবিটি পছন্দ না হওয়ায় তারা তা নগর বৈঠকখানায় বা প্রদর্শনশালায় (Salon/Town hall) নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে সুশীল সমাজ ছবিটিকে ‘হাস্যকর’ বলে রায় দেয়। পল গগা, যিনি নিজেও তার নতুন ধরনের বিরক্তিকর চিত্রের কারণে তখন কোণঠাসা ও আরও ক’জন মাত্র ছবিটিকে নতুন দিশা বলে মত দেন। ছবিটি বিশ বছরের জন্য হারিয়ে যায়। ঘনকবাদী (cubist) চিত্রকরেরা প্যারিস জয় করলে ও ছবিটি নিয়ে আগ্রহী হলে, পরাবাস্তববাদীরা (sureealist) প্যারিসে ঘাটি গাড়লে ও ছবিটি নিয়ে উৎসাহী হলে, পিকাসো আমেরিকান শিল্প সংগ্রাহক অস্ত্র ব্যবসা ঘনিষ্ঠ জন কুইনের (Joan Quinn) পরামর্শককে ছবিটি নিয়ে বললে এবং কবি জ্যা কঁকতো ছবিটি নিয়ে লিখলে ছবিটির ভাগ্য বদলে যায়, সাথে গণ এরও। এভাবেই কবি সমাজকে পথ দেখান।
জোস্না রাতের মরুভূমিতে ঘুমন্ত কালো বেদুইন রমণী, দূরে পাহাড়, শিয়রে পানপাত্র, পাশে বাদ্য যন্ত্র, পেছনে সিংহ, যার রমণীকে খেয়ে ফেলার কথা কিন্তু কোন এক রহস্যে সে শুধুই দর্শক। কি সেই রহস্য ঘুমন্ত মুখের অপরূপতা নাকি কৃষ্ণকলি সৌন্দর্য্য! মরুর বুকে কোথাও পায়ের ছাপ নেই, এটা চিত্রকরের ভুল নাকি স্বপ্নের চরিত্রদের ছায়া ও ছাপ পড়ে না মাটিতে!
লেখক : চিত্রকর