কবিতা

আনোয়ারা সৈয়দ হক
আগ্রাসী সময়
বিরুদ্ধ স্রোতের মুখ খুলে গেছে বড়
দ্রুততার সাথে
এখন কোনখানে রাখি হাত কোনখানে
এখন বারুদে জ¦লছে ক্ষুধা
আর ক্ষুধায় জ¦লছে শরীরের তাপ
এখন তাপের ভেতরে কালনিশা
শকুনের ডানার ঝাঁপট
রিরুদ্ধ স্রোতের মুখ খুলে গেছে
বড় দ্রুততার সাথে
এখন আগ্রাসী সময়ের দাপট।
২. সেভাবেই জেনেছি আজীবন
শিলোঞ্চ খেয়ে জীবন করেছি পার
আমার জন্ম নদীর ওপার
শীতগ্রীষ্ম বাছিনি কখনো
জীবন যখন যেমন
সেভাবেই জেনেছি আজীবন।
৩. তুমি এক অলৌকিক
তুমি এক অলৌকিক স্বপ্নঅলা
একথা বলার আগে
চলে গেলে অচেনার জলে ডুব দিতে
হতভম্ব আচানক আমার আমিকে
রুদ্ধশ্বাস করে
শাদাশঙ্খ সাপের ঝাঁপিতে আমরণ অনশন
নীল বেদনার ভারে ভারাক্রান্ত এই আমি তবে
জীবনের স্বাদ চলে গেছে জীবনের
ওপারের বিরান পাথারে
মরণের তীব্র চিৎকারে পুরাতন পাটাতন
আছড়ে পড়েছে
আমি দিগ্বিদিক দিশাহারা
মরণের ডাকে শুধু দিই সাড়া।
অচেনার জল খুঁজে ফিরি অচেনার ভিড়ে
৪. আমি নানাবিধ
আমি নানাবিধ অভিজ্ঞতা পার হয়ে
আজ এতদূর
তৃষ্ণার আবর্তে মানুষের মুখ দেখে দেখে
কাটিয়েছি সময়ের কাল
আমি ছেঁড়াখোড়া বস্ত্রের আড়ালে চোখে দেখি ধবল পূর্ণিমা
আমি সিঁদুরের রঙে লেপ্টে থেকেছি আমরণ
আমার হাতের তেলোয় পৃথিবীকে দেখেছি অসম্ভব এক গোল
আমি তবে এমনই খোদিত বাসনার এক ছবি
যা বিশ্বকে ধারণ করেছে অকৃত্রিম অবয়বে।

রবীন্দ্র গোপ
মায়ারং ক্যানভাস
(সদ্যপ্রয়াত চিত্রশিল্পী কালিদাস কর্মকার স্মরণে)
মৃত্যুতো প্রাণের উৎসব, জীবনের জাগরণ
নতুন বৃক্ষের অঙ্কুরোদগম ফুলে ফলে ছায়াদান
স্বপ্নের ঘোরের মাঝে ভগবানে আরাধনা নিজেকে সমর্পণ
বরফ শীতল শরীরের ভাঁজে ভাঁজে রঙের বিচিত্র খেলা।
তবু মানুষ সাজায় অলৌকিক স্বপ্নবিলাসের
তেলরং পাললিক ক্যানভাস পাথরের টুকরোতে
কড়ি আর কাই্যতানে রঙের নাচনে শব্দের ঢেউয়ে
সাজায় জীবন শেষের চিতাটি, আসা যাওয়ার পথে।
শুধু দেখাদেখি ভালোবাসাবাসি চুম্বনে চুম্বনে
শব্দ রঙের মেলায় স্বর্গের সিঁড়িটায় আল্পনা আঁকা
মাটিতে শস্যের জীবন মাটিতে দেহটি ঘুমায়
আগুনে বেঁচে থাকার কান্নাজল…।
ঘৃতাগ্নি ভালোবাসায় দেহটি পোড়ায়
পৃথিবীটা দু’দণ্ড বিশ্রামের বটবৃক্ষ ছায়া
মায়ারং ক্যানভাসে রঙিন জীবন-শব্দ কবিতায়
সাজানো সবই অ্যাক্রেলিক, তেলরং সাদা ক্যানভাস পড়ে থাকে।

আলমগীর রেজা চৌধুরী
এলিয়েন
স্পেসশিপে ঘুরে বেড়ায়, গ্রহান্তরের কিম্ভূত মুখাবয়বÑ
প্রজাতি মানুষ।
আত্মীয়ের বাড়িতে এসে শনাক্ত করে
কী সুন্দর! মাধবীলতা ঝুলে আছে,
ঝালরকাটা আলোয় বীথিকা’র মুখ
জল অবধি হাওয়ায় দুলছে ঢেউ
দূরে সূর্য ডুবে যাচ্ছে।
স্পেসশিপের বাসিন্দা, শুধু বীথিকে দেখে,
সর্ষেক্ষেতে হলুদের হাট
স্কুল থেকে ফিরছে মল্লিকাদের দল।
আলো নিভে যাচ্ছে,
অন্ধকার পৃথিবীর ছায়ার জন্য বসে থাকে সে…
পুনরায় ফিরে আসা পৃথিবীর ছায়ায় বীথিকা থাকবে তো?
শানঘাটে সকালের রোদ্দুর পোহায় যে নারী, ওর আদল-
মেমরি চিপে পৃথক ফাইলের নাম দেয়- প্রেম।

ত্রিশাখ জলদাস
কুসুম কন্যা যথা
কালো উপত্যকা এসে
তোমাকে আড়াল করে দিলে
কী সুন্দর মেঘ
নেমে আসে পাহাড়ের চূড়ায়!
তুমি কি জলের স্পর্শে কাতর?
তোমাকে ছুঁয়ে দেয়-
ফের মেঘ ফের পাহাড় ফের বৃষ্টি
হাঁটুর নিচে কাদাজল জমে…
তোমার নগ্ন পায়ের নিচে
এই কাদা এই মাটি এই আমি
জড়াজড়ি করে শুয়ে আছি।

শামীম রফিক
ভ্রমণ
অবধারিত নিয়তির মতো রুশ, গ্রিস ও প্যারিসে যেতে হলো
মার্কিন বাদ যাবে কেন?
হায়রে রুশ, তোর গায়ে এখনও জমে আছে ভাঙনের দাগ,
নেকড়ের আঁচড়। তবে বরফের কি প্রয়োজন?
ভ্রমণ ছাড়া আমার যোগ্যতায় আর কিছু নেই-
রুশের হাওয়ার শীতল মুগ্ধতায় আমরা শিকারে গিয়েছিলাম
রঙিন পত্রালির বৃক্ষ-বনে।
পশুদের সাথে বন্ধুত্ব করতে গিয়ে নিজেদের পশুত্ব প্রকাশিত হতে থাকলে
পোড়ানো মাংসের সাথে শ্যাম্পেনের তীব্রতায় আমরা আদিম যৌন
উন্মত্ততায় মুগ্ধ। হরিণের মতো।
সঙ্গী সবারই ছিল।
আমার সঙ্গী হয়েছিল সুইডেনের সেই দার্শনিক অধ্যাপিকা-যিনি
মৌন, সুন্দরী কিন্তু বর্বর জাতিকে সভ্য করায় বিশেষ পারঙ্গম
তাঁর মূর্ছনায় ছিল দর্শনের জাদু, উদার তত্ত্ব ও মতবাদ
তার কাছে আমি দিব্যি শিশু
অভয় দিতে সে বলল, ‘নো নিড ইয়োর পৌরুষ, আমি শিকারি তাত্ত্বিক
শৈশবে ফিরে যাও, কৈশোর তোমার নিলেও যৌবন আমার উপাদান’
কি বুঝলাম আর কি বুঝিনি- উদগ্রীব ছিলাম
ফিরে গিয়েছিলাম নক্ষত্রবিহীন আকাশের নীলিমায়
সেখানেই তার সৌম্য-কোমল শিল্পের সাথে আমার প্রথম প্রণয়,
সেখানেই প্রথম মনুষ্যত্বের ঘ্রাণ পৌরুষকে ছাপিয়ে গিয়েছিল-আজও
এমন বরফের রাত চাই, বৃষ্টি কুয়াশায় যার গ্রীবা স্বয়ং উন্নত
স্কচ আর অধ্যাপিকার উষ্ণতায় সৃষ্ট নীলাভ যৌবন ঈশ্বর দিয়েছেন
বরফের তীব্রতা থেকে রাতে আমি রেইন কোর্টের আশ্রয় চেয়েছিলাম
আমার হ্যাভারস্যাগে ছিল কবির ভাইয়ের দেওয়া একমাত্র রেইনকোর্ট
খুলতেই বেরিয়ে এলো আকাশসমেত ত্রিভুজাকৃতির পৃথিবী
তার বুকে তুলতুলে কম্বলের আদরে সাজানো বিছানা,
কবির ভাই, অধ্যাপিকার বুকেও আমার চেতনায় আপনাকে রাখার চেয়ে
ধৃষ্টতা আর নেই, আমার তন্দ্রাচ্ছন্নতায় সর্বস্ব দখল করে নিলেন অধ্যাপিকা
আজ হয়তো তাকেই আবিষ্কার করতে হবে।
আমি বার বার স্ফীত গৌরবে বানার নদের পুনরুদ্ধারের কাহিনি ব্যাখ্যা করব,
পাল্টে যাবে আমার পৃথিবী, বাজিকরদের শাণিত অভিজ্ঞতা
নিয়ে আমি উড়াল দিব আকাশে। যেখানে আমি শুধু কল্পনা দিয়ে যেতে পারিনি।
আর গ্রিসে, প্রতিজন গ্রিক দেবতার সাথে দেখা করেছিলাম,
তাদের সাথে ডিনার করেছিলাম,
তারপর বহুরাত ধরে তারা আমাকে মানুষের বহুমাত্রিক
জটিলতার বিশ্লেষণ শোনালে কখনও আমি স্মিত আবার
কখনও অবনত মস্তকে বসে থেকেছি
আমার কোনো প্রশ্ন ছিল না, কেননা
আমি সব বুঝতে পারছিলাম
কখনও কোনও খটকা লাগলেও তা তো আমি গোপনেই বিশ্লেষণ করে নিতে পারি
আমি বুঝতে পারছিলাম তারা আমাকে সরাসরি কোনো
উপদেশ দিবে না,
সহযোগিতাহেতু বলবে না কি করে মানুষেরা মানুষ হবে।
মানুষ হবার অভিপ্রায়ে আমি তোমাকে খুঁজতে চেয়েছি
ভেবেছিলাম গভীর রাত্রিতে ঘুম থেকে জেগে দেখবো তোমার আলতো চুমু
আমার ঘুম ভাঙার কারণ-
আর তুমি চকচকে চোখে বলবে : ‘ছুটি তো শেষ, কালই চলে যাবে?’
আমি জানি, ওখানেই শেষ নয় কথাগুলো,
ওখানেই শুরু
পৃথিবীতে প্রেম নেই এ রকম সত্য আমি বলছি না, আমার না পাওয়ার গল্প বলতেই-
শেষ প্রহরের চাঁদ অত্যন্ত সুরেলা কণ্ঠে গেয়ে উঠল,
তারপর আমার কাব্যিকতার কোনো মূল্য নেই,
আমাকে স্বীকার করে নিতেই হলো এখানে কবিত্বের মাপকাঠি বই বিক্রি করা দিয়ে,
প্রকাশক নিরুপায় ঢং-এ তার যথাসম্ভব ভদ্রতায় উপেক্ষার গল্প শোনালো
পুরস্কার না পেলে কোনো স্বীকৃতি নেই। অথচ দেখুন, সেই অধ্যাপিকার নামটা
পর্যন্ত আমি জানি না, তার সেল ফোন বা ই-মেইল কিছুই নেই আমার কাছে।
কি হবে এমন পৌরুষত্ব দিয়ে, ভীরুতার কথা অনেকেই বলে
আজ বুঝতে পারি কেন একটি গোলাপও পাইনি জীবনে
কেন এই পৃথিবী ছেড়ে যেতে এত ভয়
কেন চুমুতে লুকিয়ে থাকে ভ্রমণ কাহিনি
কেন আমি জীবনের অধ্যায়গুলো আলাদা করতে পারি না
কেন আমাকে কারণিকের আড়ালে দারোয়ানের অভিনয় করতে হয়
কেন ধূলিতে ঢেকে আছে আমার রেইনকোর্ট
কেন প্রিয় হতে না পারা নদী আমাকে প্রতিরাতে ডাকে
কেন আমাকে অতৃপ্তিতে কাটাতে হচ্ছে এই কুয়াশাচ্ছন্নতা
কেন এই রাতের অন্ধকারে আমি ঘুমুতে পারি না।
দু’চোখে এত ঘুম নিয়ে ধূসরতার বহুবিধ কারণ নিয়ে গবেষণা করি
ধূসরতা একদিনে জমা হয় না, লাগে দীর্ঘ সময়। ব্যর্থতার অন্ধকার পায়ের সামনে হেঁটে চলে
ছায়ার ভেতর তাদের পৈশাচিক নৃত্য, তারা এইভাবে ছাড়বে না আগুনের গ্রাস
অগ্রহায়ণের স্বাদ নিতে সমবেত মানুষের উল্লাসে আমার কেমন প্রাণহীন পদচারণা
এটা কার ভালো লাগবে?
তারা তো জানবে না : ‘ইচ্ছে ও সুযোগ দু’পথে হাঁটে।’
আমি চাইলেই পারি না তাদের এক করে দিই।
আমি ক্রমশঃ ভ্রমণ থেকে রম্য উল্লাসের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশে ডুব দিই
আরাধ্য মানুষের কাছে জীবনের গল্প বলতে চাই
শরীর নয়, মনের আবিরতাই বড় হয়ে ধরা দেয়
দার্শনিকতার কোঠরে দুইঘণ্টা বন্দি রেখে আমি জীবনের কাঠবিড়ালির সন্ধান করি।
এত সহজেই বললাম, প্যারিস তো সব-
খুলে দিলো আত্মার চোখ
খুলে দিলো শিল্পের দরোজা
খুলে গেলো অতৃপ্তিতে জমে থাকা আত্মার ভূত
খুলে গেলো বিবর্ণ দশকের মারপ্যাঁচ
এত শিল্পিত,
এত পুষ্পিত,
কারুকার্যময় শিল্প আমি আগে দেখিনি
প্রতিটি বাড়ি জাদুঘর,
প্রতিটি গাছ ছায়া নিয়ে,
প্রতিটি মানুষ,
বাতাসের দাপাদাপি- সব
ওয়াইনের সাথে কুকুরের মাংস খেতে খেতে রুশকে মনে পড়ছিল
গ্রিসকে মনে পড়ছিল
এথেন্সের রাজকন্যাকে মনে পড়ছিল
আর ইচ্ছে করছিল না দেখি মার্কিনের অন্ধকার গুহায় অস্ত্রের গান
মনে পড়ছিল অধ্যাপিকার সর্পিল দেহ আর দার্শনিকতা
ভাবতেই পারছি না এত সুখ কোথায় ছিল শরীর না দার্শনিকতায়
আর চোখের সামনে ঝরে ঝরে পড়ছিল রুশের বরফ
হ্যাঙ্গারে রেইনকোট, কবির ভাই
টেবিলে খাতা আর কলম
বুকের মাঝে পুঞ্জীভূত মেঘ
বাতাসে দুলছে নিষ্ঠুর সময়
আমাকে চলে যেতে হবে! কিন্তু…
এখনও অনেক কাজ বাকি।
পথগুলো কি চিনে গেছি?
আমার সরল বিশ্বাসের অলিগলি ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না এখন
মালার্মে, গিনসবার্গ, ওয়ার্সওয়ার্থ, ভ্যানগগ কাকে ছেড়ে কার দিকে
চোখ ফেরাই? তারা নেকড়ে বধের কথা শুনালো
তারা হায়েনাদের প্রতিহত করার জন্য কবিতা লিখেছে
শুনে তো আমি হতবাক, বন্দুক লাগবে না?
ওরা আমার অপরিপক্বতা দেখে হাসলো-আর কিছু বলল না
কেননা, তারা জানে ভ্রমণে এর চেয়ে বেশি অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই।
আমি লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে বুঝলাম হয়তো একদিন আমিও পারবো
কিন্তু দৃঢ়তা এলো না,
সেই প্রস্তুতি নিতে সময় লাগবে না?
পথগুলো থেকে তুলে আনতে হবে স্বপ্নের ভ্রমর?
ডানা না থাকলেও উড়বার ধৃষ্টতা আমার হচ্ছে
পথ না দিলেও হাঁটবার সাহসিকতা হাতছানি দিচ্ছে
আরাধনার সব পথ তো রুদ্ধ হতে পারে না।
এতকাল যখন পুড়েছি
আগুনের ক্ষয় যখন শিখেছি
এই দীর্ঘ ভ্রমণে অন্তত একটি আলো জ্বলবেই।
২৭.০১.২০২০

বদরুল হায়দার
দুঃখের বিশ্বজয়
আমার দুঃখগুলি সূক্ষ্মমাত্রায় অপার বিশ্বায়ন।
হৃদয়ানন্দ আগুনে পোড়ে, সিডরের আনাগোনা
হানা দেয় অজানায়। গভীর মমতা মেখে জড়ো হয় বেড়াজালে।
বেদনারা সংঘাতের সাধনা শেষে আদিরসে
মনের বিরাগ বশে আত্মীয়তা গড়ে সেবাদাসে।
অপ্রেমের আদিখ্যেতা ব্যাখ্যাতীত সাফল্যের কাছে
জমা রাখে স্বার্থপরতা আর অসততা পাস্তুরিত সম্পর্কের মতো
যত্রতত্র সাময়িক সুবিধায় টানে বিরোধী আন্তরিকতা।
প্রেম হতাশায় নবায়ন করে আত্মরতি। গোপন মনের
অবরুদ্ধ কলে বলী হয় সমস্যা দুরাশা। তুমি জবাবদিহিতার
ছলেবলে পাশা খেলা শেষে জারি করো প্রেমের বিরতি।।
আল্টিমেটামে বিলুপ্ত অভিমানে তুমি ভাগ করো প্রিয়মন। আমি
নাটের গুরুর হারজিতে ব্যর্থ আয়োজনে খুঁজি হারানো আপন।
প্রতিদিন শেষ না হওয়া ইনিংসে চলে উত্তাল ঘোষণা
জীবনের আড়িপাতা প্রলোভনে আনে বেদনার টান।
সুখ দুঃখের দোলাচলে ঋণী হয় প্রেমিকের মূলধন।
তুমি অবাধ্য ফুলের রঙেঢঙে সাজো প্রকৃতির ভুল
আমি ফুল ভেবে চাষ করি রাশিরাশি হারানো নির্ভুল।

রনি অধিকারী
নোঙর পড়েছে ভোরে
বেদনার বালুচরে ফেলে আসা দিনগুলি যদি
নিঝুম মায়াবী রাতে শূন্যমনে দুস্থদেহ নিয়ে
একাকী সাঁতার কাটি ত’বে হোক কৃষ্ণপক্ষ রাত!
বুকের গভীরে সব কষ্টগুলো ডানা ঝাঁপটায়…
নিঃশব্দ শোকের ঘ্রাণ সৌরভ বদলে তুলে আনি
জীবন পঞ্জিকা থেকে খুঁজি জোনাকির নিরবধি।
নিষিদ্ধ পাতার ছায়া ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় অহর্নিশ…
একবার ছুঁয়েছিল বহুগামী মেঘের শরীর
শরীরের ভাঁজ খুলে চলে যায় অজানা দিগন্তে।
মাথার ভিতরে চোখ আলোর ফুলকি বেয়ে চলে…
গুচ্ছ গুচ্ছ অন্ধকারে বৃষ্টিতে বিলীন হ’বে সব।
লুকিয়ে পড়েছে আলো ঢেকে যাচ্ছে গভীর কুয়াশা…
ছিঁড়ে যাচ্ছে সতীচ্ছেদ অন্ধকার অক্টোপাসে যতো।
নোঙর পড়েছে ভোরে এবার গহিন নিরুদ্দেশে…
উড়ে যাবে বৃক্ষ-লতা, নদী-হ্রদ সব সব সব।

মনসুর আজিজ
তারুণ্যের উচ্ছ্বাস
তারুণ্যের উচ্ছ্বাসকে মাটির তলায় চাপা দিয়ে এগিয়ে এসেছি পথ
আবেগকে লটকে দিয়েছি আমগাছের উঁচু ডালে
বাঁশের চুঙ্গা কেটে কোচড়ে নিয়েছি জমানো রেজগি
কলাইভাজা চিবোতে চিবোতে সেই যে পথে নেমেছি; আর থামিনি
বুনোপোকার দল হয়েছে আমার সঙ্গী
ধানক্ষেতের কাকতাড়ুয়া হয়েছে আমার সাহস
শেয়াল আর পেঁচার ডাক হয়েছে নিশুতি রাতের সঙ্গীত
জোনিপোকা হয়েছে অদেখা পথের দিশা…
ঝাঁকড়া পাতার বটগাছকে আজও ওস্তাদ মানি
কীভাবে ক্লান্ত পথিককে আশ্রয় দিতে হয় শিখেছি তার কাছে
নৌকার কাছে শিখেছি কীভাবে ভেসে থাকতে হয় সঙ্কুল পরিবেশে
আকাশের কাছে শিখেছি উদারতা,
ওই তো দূরের মাঠ, বাউন্ডুলের আশ্রয়দাতা
সারি সারি তালগাছ তার দোসর,
দিঘি তার বড়বোন
আহা মটরের ক্ষেত! দুয়ারভাঙা কিশোরের আহারের আঞ্জাম দিয়েছো তুমি
ওই যে খড়ের গম্বুজ! শীতের রাতের উষ্ণ অভ্যর্থনায় কত রাত কেটেছে তার গুহায়
একবার ইশারায় কাছে ডাকো ও আমার নদীভাঙা চরের গ্রাম
তোমার কোলে বাউন্ডুলের দল উল্লাসে মেতে আসি একটি রাত
যেন হাজার রাতের উচ্ছলতা কোচড়ে গুঁজে ফিরে আসতে পারি
আমাদের এই ইটের শহরে।

সাইয়্যিদ মঞ্জু
উদ্বাস্তুকাল
মরুর তৃষ্ণা স্পর্শ করে আছে বুক
দূর থেকে বয়ে আসা কোনো এক জলধারা
কলতানে লিখে যায় পিপাসার দীর্ঘায়ু।
নির্ঘুম চোখ আঁকে রাতের মানচিত্র
নিশাচর ডেকে যায় খুউব কাছাকাছি
কোন সে পাখির ডানা-
ভারে তুলে আনে পরমাদরের নরোম ভিটে মাটি-
অঝোরে নহর, বিম্বিত এ আঁধার-
অগোচরে বহমান অমুদ্রিত বর্ণের চোখ
সাক্ষী থেকো যামিনী
কতটা শূন্য বিরান, দুঃসহ- এই উদ্বাস্তুকাল।