শরতের গুচ্ছকবিতা : রবিউল হুসাইন

শরতের গুচ্ছকবিতা
রবিউল হুসাইন
সাত-শরতে
এক. শাদা মেঘ মায়ের দুধ হয়ে
আকাশ পবিত্র অমল বাতাস বহমান দিগন্তে
শাদা মেঘ মায়ের দুধ হয়ে ভাসা ভাসা
কোথায় যে যায় অবলীলায় সুদূরে মিলায়
আজ কোথাও পাখি নেই শুধু একটু ভালোবাসা
মুখ ফিরিয়ে কাছে এসে হেসে হেসে কুশল শুধায়
পলিমাটির সন্তানসব কেমন আছে ভালো তো
কতদিন দেখা নেই শাশ্বত এই বাংলার সবুজে
শস্য নদী ফল ফুল খালবিল প্রজাপতি সতত
সঞ্চরমান কর্মযোগী তারা সাহসী লড়াকু বাঙালি
বিশ্বাসের শাদা ভেলায় উড়িয়ে দেয় আশা-আকাক্সক্ষা
দিক্বিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মেঘের বরাভয় আশ্বাসে
শান্তির শাদা পতাকা ওই দৃশ্যমান শাখা-বিশাখা
কোনওদিন থামবে না এই শরতের শান্তি ও শুভ্রতার মিছিল
মানুষ ও ধরিত্রীর মেলবন্ধন যতদিন আগুয়ান হৃদয় স্বপ্নিল
দুই. শরতের আসার আশায়
এই কাল নিরবধি চারিদিকে কী উজ্জ্বল অনিঃশেষ সমাধি
ভেসে ভেসে গড়িয়ে গড়িয়ে শাদা ভেলাগুলো মেঘ সরিয়ে
সমুদ্র থেকে উঠে এসে আকাশে পাখা মেলে ওড়ে বাতাসে
শত সহস্র বছর ধরে এইভাবে শরতের উত্থান নিজস্ব স্বভাবে
সবুজ মাটি নদীর ধুধু চরে গেয়ে ওঠে কাশফুল চামর দুলিয়ে
সোঁ সোঁ সেই নিঃশব্দ সঙ্গীতে ভ্রমর প্রজাপতি গুন্গুন্ অদ্বৈতে
মেলে ধরে মৃত্তিকাজল বৃষ্টির শ্রাবণে র্ঝ র্ঝ ঝরে যায় দক্ষিণে
উত্তরে নিঃসঙ্গ পাহাড় মাথা উঁচিয়ে সাগরের দিকে চেয়ে থাকে দাঁড়িয়ে
কখন যে দলে দলে হবে বহমান শাদা মেঘ পরিয়ে দেবে শিরস্ত্রাণ
আকাশে বাতাসের বসবাস শাদা শাদা মেঘের অগাধ বিশ্বাস
সেখানে শরৎ কিছুদিন থাকে তারপর উড়ে উড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে
শরতের আসার আশায় প্রতিনিয়ত প্রতীক্ষায় তবুও মানুষ কী সহায়
তিন. শাদা ডানার পাখি সব মেঘমালায় উড়ে যায় অবলীলায়
নিচের অতলে অগাধ জলমগ্নতার লহরী জলসুন্দরী প্রহরী
বৃক্ষশাখায় ফড়িং মৌমাছি কাঠবেড়ালি আম্রপালী মিতালি
নিঃস্বতায় শূন্যে মিলায় অদৃশ্য বাতাসের সঙ্গে নিঃসঙ্গে
ঝরে হলুদ পত্রপল্লব পড়ে ঘুরে নিচে মাটির গায়ে ডানে বায়ে
মানুষেরা উড়ে উড়ে দূরে যায় কাছে আসে না এইকাল চিরকাল
ওই যে শরতের শাদা মেঘ তাকে নিয়ে যায় ভেসে ভালোবেসে
কোনওদিনও কী দেখা হবে আবার প্রকৃতির প্রান্তরে হুহু অন্তরে
চার. দুঃখী শরৎ কী বিষন্ন
একটুখানি শান্তি সুখ
বিপরীতের কী ব্যথার দুখ
পেয়ে মানুষ খুশি খুব
নীল বেদনায় দিয়ে ডুব
গাঝাড়া দিয়ে উঠে এসে
এক কাপ চা নিয়ে বসে
দূর জানালায় যায় যে দেখা
শরত পাখির শাদা রেখা
মেঘের সঙ্গে উড়ে উড়ে
কোথায় যায় আকাশজুড়ে
সেও যদি মেঘের দলে
মিশে যেতো মন্ত্রবলে
মেঘে মেঘে শুভ্র শূন্য
দুঃখী শরৎ কী বিষন্ন
পাঁচ. শিমুলের তুলো ওড়ে আকাশে
এখন তখন নয় কখনও ছিল না কখনও হবেও না
যেহেতু যা হবার তা হয়ে গেছে কতকাল গতকাল যে
আজকাল নয় এ কথা সবাই জানে জেনেছে সে নিজে
তবুও পাখি ওড়ে মহান শূন্যে অপরাহ্নে দিগন্তে ওই অজানা
কিছু অন্ধকার সঘন আন্তরিক বিবেচনায় বাতাসে ওড়ায়
মানুষের স্বপ্নসাধ অগাধ বিশ্বাস সৌহার্দ প্রীতি ভালোবাসা
বিবিধ উচ্চারণে পাখিরা ডেকে ওঠে নিঃশব্দে প্রত্যাশা
মেঘবতী হয়ে ইচ্ছে করে সুদূরের পথে পথ হারায়
সেই পথ মেঘে মেঘে শুভ্রতার শান্ত শোভনে ভাসে
বিষণ্ন শূন্যতা পরিপূর্ণ হয় আনন্দ আর আমোদিত মনে
বাতাস নিঃশব্দ হলে সবকিছু নিরানন্দে বিচ্ছিন্ন বিজনে
বর্ষার শ্রাবণ শরতে অবশেষে শিমুলের তুলো ওড়ে আকাশে
ছয়. বুকের শুভ্রতা থেকেই উড়ে চলা শুরু
শরৎ এলো ফিরে হাওয়ায় হাওয়ায় শাদা পাল উড়িয়ে
নীল আকাশে পেঁজা পেঁজা তুলোর বান্ডিল ভেসে চলেছে
উদাস সময়টি আরও উদাস হয়ে শূন্যের সঙ্গে মেঘের গায়ে
গড়িয়ে গড়িয়ে যে কোথায় কোন ঠিকানায় উন্মনা ডানা মেলেছে
নিজেকে নিঃস্ব করে আর কতদিন চলবে এই বিহঙ্গের খেলা
অভিবাসী চলমান পাখির সংসার ঘটিবাটি বাবুই বাসা
সব নিয়েই পাওয়া যায় মানুষের বহমান স্বীকৃত অবহেলা
অনিকেত বিপন্ন উদ্বাস্তুর মর্মন্তুদ হা-হুতাশ স্বপ্নভঙ্গ দুরাশা
সঙ্গে নিয়েই এই পরিযায়ী যাত্রা শীতের শৈত্য সমাগমে
প্রকৃতির নিজস্ব ষড়ঋতু-সংবিধান বাৎসরিক অনুষ্ঠান
ঘুরে ফিরে আসে বারবার প্রতিবার এক ঐকিক নিয়মে
বুকের শুভ্রতা থেকেই উড়ে চলা শুরু অন্তরীক্ষে বিব্রত বিজ্ঞান


