ভালোবাসি বাংলাদেশ

মানিক মনোয়ার

জাস্টিন বিবার হয়ত তোমার প্রিয় হয়ে গেছে খুব
লেডি গাগার বাদামি চুল আর বিয়ন্সে’র গানে সাজিয়েছ তোমার টাইমলাইন।
তুমি বুঝি, একটি ফুলকে বাঁচানোর গান কখনও শোননি ?
যে ফুলকে বাঁচাতে যুদ্ধ করতে হয়েছিলো ন’টি মাস।
পিপিলিকার মতো সারিবদ্ধ শরণার্থীতে সেজেছিল যশোর রোড।
তুমি বুঝি, তীরহারা সে ঢেউয়ের গানটি শোননি ?


শোননি রবি শংকর, জর্জ হ্যারিসনের ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’
শোননি, নজরুলের মৃত্যু-সাইরেন বেজে ওঠা ঊর্র্ধ্ব গগনের রণসঙ্গীত
শোননি, কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙে মুক্তি-নিশান আনার সঙ্গীত;
হে প্রজন্ম, তুমি শুনে দেখো একবার
তোমার বিবার, বিয়ন্সে, লেডি গাগা লজ্জায় মিলিয়ে যাবে বহুবার।

আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার আর লিন্ডা হ্যামিল্টনের বীরত্বে অভিভূত হও বুঝি ?
আমি ওসব মিথ্যে বীরত্বে বিমোহিত হই না কখনও
তুমি বুঝি বঙ্গবন্ধু’র বীরত্বের কথা শোননি
বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম, বীরপ্রতীকের বীরত্ব শোননি
এস-ফোর্স, কে-ফোর্স, জেড-ফোর্সের বীরত্ব শোননি
কৃষক, শ্রমিক, মজুরের অস্ত্র হাতের বীরত্ব শোননি
ক্যাপ্টেন মতিউরের টি-৩৩ বিমান ছিনতাইয়ের বীরত্ব শোননি
প্রীতিলতার সায়ানাইডে আত্মহননের বীরত্ব তুমি শোননি
শোননি রশিদ তালুকদারের স্থিরচিত্রের বীরত্ব।
হে প্রজন্ম, তুমি শুনে দেখো একবার,
মুখ থুবড়ে পড়বে তোমার আর্নল্ড আর লিন্ডা হ্যামিল্টনের মিথ্যে বীরত্ব বারেবার।

‘টারমিনেটর’ আর ‘ট্রান্সপোর্টার’ দেখে বুঝি অবাক হয়েছিলে খুব ?
বুকের মধ্যে গেঁথে নিয়েছ ‘ক্যাপ্টেন এ্যামেরিকা’।
ওসব মিথ্যে দেখার কৌতূহল আমার জাগেনি কখনও
রুপালি পর্দা ছিড়ে সাদাকালোয় আমি দেখে নিয়েছি ‘স্টপ জেনোসাইড’।
‘ট্রান্সপোর্টার’ আর ‘ক্যাপ্টেন অ্যামেরিকা’ আমি ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছি নিমিষেই
দু’চোখ ভরে দেখে নিয়েছি, নাইনটিন সেভেন্টি ওয়ানের ‘অপারেশন সার্চলাইট’
রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারেও দেখেছি শুধু রক্ত আর রক্ত
শক্ত বুট জুতায় পিষ্ট হওয়া বৃদ্ধের বুক
উল্লাসে উল্লাসে আগুনে পোড়ানো শহরকে-শহর, গ্রামকে-গ্রাম।
পাখির মতো মেরে ফেলা নিরস্ত্র পুরুষ
বেয়েনেটের খোঁচায় বের হওয়া মাতৃগর্ভের অপুষ্ট নবজাতক
বোনের বিবস্ত্র উন্মুক্ত ভারী বুকে শকুনের উন্মত্ততা আমি দেখেছি
দেখেছি, মাঝখানে শিকার রেখে হিংস্র পশুর মাংস ছিঁড়ে খাবার দৃশ্য
শিকারির মাংস ছিঁড়ে উল্লাসে ডানা ঝাপটানো শকুনের রক্তাক্ত ঠোঁট আমি দেখেছি
বর্বরতা ছাপিয়ে সে কি নির্মম, নৃশংস, বিভৎস।

আগুনে পোড়া তামাটে ঘরটা, আমার ঘর
বুটের আঘাতে মৃত্যু হওয়া বৃদ্ধ আমার পিতা
বুকে গুলিবিদ্ধ পাখির মতো পরে থাকা পুরুষ আমার ভাই
বেয়েনেটের খোঁচায় নবজাতক বের হওয়া নারী আমার মমতাময়ী মা
শকুন আর হিংস্র পশুর মাঝখানে পরে থাকা অসহায় শিকার আমার বোন।

হে প্রজন্ম, যদি সময় হয় কখনও
সব মিথ্যে ভেঙে একবার শিকড়ের কাছে এস

—————–

Read Previous

শব্দের শহর ঢাকা

Read Next

ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেলভ্রমণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Most Popular